বালুকণার চেয়েও ছোট ‘রোবট’?
ছোট-বড় নানা আকারের রোবট বা যন্ত্রমানব তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এবার তাঁরা খালি চোখে দেখা যায় না—এমন অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক রোবট তৈরির সম্ভাবনা দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক এ রকম আশার কথা শুনিয়েছেন।মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকেরা অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আণুবীক্ষণিক বস্তুর শিকলকে লম্বা করার কৌশল আবিষ্কার করেছেন। আর তা থেকে ভবিষ্যতে আণুবীক্ষণিক রোবট বা মাইক্রোবট তৈরি করা যাবে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। এসব মাইক্রোবটের আকৃতি হবে বালুর একটি দানার চেয়েও ছোট।
গবেষকেরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এমন মাইক্রোবট তৈরি করা সম্ভব হবে, যা কোন যন্ত্রের বৈদ্যুতিক তারের কোনো ত্রুটি নিজে নিজেই সারিয়ে তুলবে। এ ছাড়া মাইক্রোবটেরা একদিন মানুষের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে কোনো অসুখ সারাতে পারবে অথবা কোনো বিস্ফোরকের মধ্যে প্রবেশ করে একে অকার্যকর করতে পারবে। অর্থাৎ মাইক্রোবট এমন স্থানে যেতে পারবে, যেখানে যাওয়ার জন্য মানুষ কখনো চিন্তাও করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক অল্প বিদ্যুতে আণুবীক্ষণিক বস্তুতে গঠিত শিকলকে দীর্ঘ ও শক্তিশালী করার প্রয়াসে সফল হয়েছেন। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক মাইকেল সলোমন ও শ্যারন গ্লৎজার। এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি নেচার ম্যাটেরিয়ালস সাময়িকীতে গত সোমবার প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা পলিস্টাইরিন নামে এক ধরনের যৌগের তৈরি গোলাকার বস্তুকে একটি যন্ত্রের সাহায্যে টেনে লম্বা করে চালের মতো আকৃতি দেন। তখন বস্তুটি হয় দৈর্ঘ্যে তিন মাইক্রন আর প্রস্থে দশমিক ৬ মাইক্রন (গড়পড়তা চুলের প্রস্থ হয় ১০০ মাইক্রন)। ওই চাল-আকৃতির বস্তুর এক পাশে সোনা যুক্ত করেন। আর পৌরাণিক দেবতার নামানুসারে এর নাম দেওয়া হয় জানুস।
লবণাক্ত পানিতে একটি জানুসের সোনা লাগানো অংশ অপরটির একই অংশকে আকর্ষণ করে। লবণ বেশি হলে আকর্ষণও হয় বেশি। তবে এ ক্ষেত্রে লবণের দ্রবণের সবচেয়ে আদর্শ মাত্রাটি ‘পাওয়ারেড’ নামক কোমল পানীয়র অর্ধেক। পাওয়ারেড ক্রীড়াজগতে জনপ্রিয় একটি কোমল পানীয় হিসেবে পরিচিত।
গবেষকেরা লবণাক্ত পানির দ্রবণে জানুসের এ রকম পাশাপাশি যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে লম্বা শিকল তৈরি করেন, যেখানে ৫০ থেকে ৬০টি বস্তু একসঙ্গে যুক্ত থাকে। আর দ্রবণে বৈদ্যুতিক চার্জ প্রয়োগ করে এই শিকল আরও লম্বা করা যায়। একে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যায় বলে দাবি গবেষকদের। আর তখন শিকলের বন্ধন আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়।
শ্যারন গ্লৎজার বলেন, জানুসের এভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে মানুষের শরীরের মাংসপেশির সঙ্গে তুলনা করা যায়। জানুসের পরস্পর যুক্ত হওয়া ও একে দীর্ঘায়িত করার ব্যাপারটি নিয়ে তাঁরা কয়েকবার পরীক্ষা করেছেন। আর প্রতিবারই এই শিকল তৈরির ওপর তাঁদের পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল।
বিজ্ঞান সাময়িকী লাইভসায়েন্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্লৎজার বলেন, পরীক্ষার মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয় যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন করে আণুবীক্ষণিক যান্ত্রিক বস্তু তৈরি করা সম্ভব, যা প্রয়োজনে সাড়া দেবে।
সলোমন বলেন, লবণাক্ত পানিতে সোনাযুক্ত আণুবীক্ষণিক বস্তুর পারস্পরিক বন্ধন বেশ শক্ত হয়। তবে ওই সময় বস্তুগুলোকে আলাদা করতে যে শক্তি প্রয়োজন হয়, বৈদ্যুতিক চার্জ প্রয়োগের পর তাদের আলাদা করতে শক্তি লাগে তার চেয়েও অনেক বেশি।
গবেষকেরা আশা করছেন, আণুবীক্ষণিক রোবট তৈরিতে এটি একটি বড় অগ্রগতি। ভবিষ্যতে আরও অনেক রকমের বৈশিষ্ট্য ও কর্মক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোবট তৈরি করা সম্ভব হবে।
তবে সলোমন স্বীকার করেন, মাইক্রোবট তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধাও আছে। প্রথমত, ভবিষ্যতের মাইক্রোবটকে স্বয়ংক্রিয় হতে হবে। দ্বিতীয়ত, অন্য বস্তুতে ধাক্কা বা টান দেওয়ার মতো শক্তি প্রয়োগের সামর্থ্য থাকতে হবে মাইক্রোবটের।
সূত্র: লাইভসায়েন্স।
No comments:
Post a Comment